এবিএনএ : ঊষালগ্নে রাগালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ছায়ানটের এবারকার বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা। ভোরের হাওয়ায়, গাছের পাতায়, লেকের পানিতে যেন সুরের দোলা লাগলো। গাছে পাতার ফাঁক গলে বৈশাখের প্রথম সূর্যের আলো এসে পড়লো উপস্থিত দর্শকদের ওপরে। সমবেত কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে ওঠেন ‘আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে’। মূলত এই গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ছায়ানটের ৪৮তম গানে গানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
এদিকে, রাগালাপের সময় যখন গুটি গুটি পায়ে সঙ্গীতপ্রেমীরা আসতে শুরু করেছিলেন এখন সামনের চত্বরটা প্রায় ভরে উঠতে শুরু করছে। মানুষ আসছে, পুলিশের নিরাপত্তা পেরিয়ে হেঁটে গান শুনতে আসছে। জঙ্গি হামলার আশঙ্কা, বাধাকে উপেক্ষা করে দলে দলে মানুষ আসছে গান গাইতে। নতুন বছরের শুরুতে মানুষে মানুষে মিলিত হবার এই যে প্রত্যাশা’ এটাই গানের সুরে শক্তি হয়ে জেগে থাকুক, মিশে থাকুক মানুষের অন্তরে। সারাটা বছর।
পহেলা বৈশাখে প্রভাতের আলো ফোটার সাথে সাথে উৎসবে মেতে উঠলো পুরো জাতি। জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে শুভ সম্ভাবনার নতুন দিন আনবার প্রত্যয়ে প্রাণের উচ্ছাসে মেতে উঠলো সংশয়বিনাশী চিত্ত। পহেলা বৈশাখে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনা বটমূলে শুরু হয় ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠান। শুরু হয় বাঙালির বর্ষবরণ। ছায়ানট আর বাঙালির বর্ষবরণ এখন সমার্থক। প্রতিবছরের মত এবারও রমনার বটমূলে শিল্পীদের গানের মধ্য দিয়েই যেন উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। শুভ দিনের প্রত্যাশায় মানুষের মনে গুনগুনিয়ে উঠলো ‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে’। স্বাগতম ১৪২৩, সুস্বাগত।
প্রকৃতির নিয়মে আসে বৈশাখ। কিন্তু পহেলা বৈশাখ জাতির জীবনে আসে দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয়ে এবার পালিত হচ্ছে নববর্ষ। পৃথিবীজুড়ে প্রতিটি বাঙালি আজ গানে গানে আহ্বান জানাচ্ছে সম্ভাবনাময় নতুন দিনকে। গানের পংক্তি উচ্চারণে তারা বর্জন করতে চাইছে জীবনে জড়িয়ে থাকা সকল পঙ্কিলতাকে। বরণ করে নিতে চাইছে নতুন বছরকে।
প্রতিবছরের মতো এবারো ছায়ানটে একটি বিশেষ বিষয়ের উপর নিজেদের আয়োজনটি সাজায়। এবার ছায়ানট তাদের আয়োজন সাজিয়েছে ‘মানবতা’র কথা তুলে ধরবার প্রত্যয়ে। মূল প্রতিপাদ্য- ‘শান্তি, মানবতা ও মানুষের অধিকার’। বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সঙ্গীত ও কবিতা পাঠের মধ্যে সম্প্রীতি ও শান্তির বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেন সকলে।